ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় তিন মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে ৩শ পরিবার। নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে ৩০টি পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন পানি নিষ্কাশনে নিচ্ছেনা কার্যকর কোন পদক্ষেপ। এলাকাবাসীর অভিযোগ দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি দুই কালভার্টের সম্মুখ অংশে বালি দিয়ে ভরাট করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ঘর নির্মাণ করার ফলেই মানুষের এই দুর্ভোগ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ঘুজিয়াখাই গ্রামের গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চকবাজারসহ এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি। গ্রামের একমাত্র সড়ক, মৌসুমি সবজি বাগান ও বাড়ির আঙিনাসহ পানিতে একাকার হয়ে রয়েছে। ভাঙন শুরু হয়েছে সড়কে। ঘরে পানি ঢোকায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই। বাড়ির আঙ্গিনা তলিয়ে যাওয়ায় শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। নলকূপ থেকেও পানি পাচ্ছে না মানুষ। গৃহবধূ মুর্শিদা বেগম বলেন, তিন মাস ধইরা পানির নিচে পইরা আমরা কষ্ট করতাছি।
আমরার পোলা-মাইয়া ইস্কুলে যাইতে পারেনা। বাজারডাও এখন পানির নিচে। খুব মসিবতে আছি। ঘরে রানতামও পারিনা। বাজারও করতাম পারতাছিনা। আমরা আছি খুব কষ্টে। শিক্ষার্থী শান্তা বেগম, লিজা আক্তার, হাসান মিয়া, জরিনা খাতুন ও আকলিমা জানায়, ১২ তারিখ স্কুল খুলেছে। বাড়ির চারদিকে পানি। ঘর থেকে বের হতে পারিনা তাই স্কুলে যাইতে পারিনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত ইট বিছানো রাস্তা সংযোগ স্থাপন করেছে নাসিরনগর থেকে পাশের সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন পর্যন্ত।
এই রাস্তায় মোট ১২টি কালভার্ট রয়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য। এর মধ্যে দুটি কালভার্ট রয়েছে নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ঘুজিয়াখাই গ্রামে। ঘুজিয়াখাইসহ আশপাশের পানি সেই কালভার্ট দিয়ে বের হয়ে বেমালিয়া নদীতে নেমে যায়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি দুই কালভার্টের সম্মুখ অংশ বালি দিয়ে ভরাট করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে ঘর নির্মাণ করেছে। নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন থেকে নাসিরনগরের ফুলকারকান্দি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ পায় হাসান ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই রাস্তায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি কালভার্ট করা হয়।
এর মধ্যে ঘুজিয়াখাই গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি কালভার্ট রয়েছে। নাসিরনগর উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসহাক মিয়া বলেন, ঘুজিয়াখাই গ্রামের জলাবদ্ধতার কথা কেউ আমাদের জানায়নি। জলাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ খোঁজে বের করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘুজিয়াখাই গ্রামের চকবাজার বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, গ্রামের দুটি কালভার্ট সাবেক ইউপি সদস্য ই্উনুস মিয়া ও গ্রামের বাচ্চু মিয়া পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ গ্রামের ৩শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে। শিশুদের চুলকানি-ঘা-পাঁচড়াসহ চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি নিজেও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। অভিযোগ স্বীকার করে সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুছ মিয়া বলেন, আমি যে কালভার্টের মুখ বন্ধ করেছি তার পাশেই একটি পুকুর ছিলো এবং বেশ কিছু পতিত জমি ছিলো। সেই পুকুর ও পতিত জমি প্রথমে ভরাট করে এসাক আলী ও ফরিদ মিয়া। তার পর আমি ভরাট করি।
এখন যদি মানুষের সমস্যা হয় তাহলে স্থায়ীভাবে একটি সমাধান করতে সবার সাথে আমি আছি। চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ জানান, কালভার্টের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবাহে বাধার কথা আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সরকারি নির্দেশ ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা বেআইনি। কেউ যদি পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হালিমা খাতুন জানান, এত পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে খবরটি আমায় কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।